এসইও হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের ("Search Engine Optimization") এর সংক্ষেপ। সহজ করে বললে, সার্চ ইঞ্জিনের visibility বাড়ানোর জন্য কোন ওয়েবসাইটকে আরও ভালো বা অপটিমাইজ করার প্রক্রিয়া।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO বর্তমান সময়ে একটি ট্রেন্ডিং টপিক্স। মুলত এসইও হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অংশ যেখানে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর বা ট্রাফিক আনার উদ্দেশে একটি ওয়েবসাইটকে অপটিমাইজ করা হয়।
এসইও-তে এমন কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের (যেমন : Google, Bing, Yahoo) প্রথম পৃষ্ঠায় কোন কিওয়ার্ড -এর জন্য একটি ওয়েবপেজকে র্যাঙ্ক করানো যায়। অর্থাৎ কোন ওয়েবসাইটকে এক বা একাধিক কিওয়ার্ডের এর জন্য সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজে (১-১০ মধ্যে) র্যাঙ্ক করানোর উপায় বা প্রক্রিয়াটিকে এসইও বলা হয়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এসইও রিলেটেড কাজের প্রচুর চাহিদা আছে। আবার, এই স্কিলটি ডেভেলপ করেলে নিজেস্ব ইকমার্স বা ব্লগ সাইট তৈরি করে আয় করতে পারবেন। আবার বাংলাদেশের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন। তাই, এটি ক্যরিয়ার হিসাবে বেশ ডিমান্ডেবল।
এই আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি এসইও নিয়ে আপনাকে একটি সচ্ছ ও পরিপূর্ণ ধারণা দিতে। এটি কত প্রকার ও কিভাবে করে সেটা নিয়েও একটি ছোট গাইডলাইন দিয়েছি।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা এসইও কি ?
SEO মানে "সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন"। সহজ কথায়, এর অর্থ হল যখন কেউ Google, Bing এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত পণ্য বা পরিষেবা সার্চ করে তখন আপনার সাইটের দৃশ্যমানতা (visibility) বাড়ানোর প্রক্রিয়া ৷
বলাবাহুল্য, সার্চের ফলাফলে আপনার সাইটের দৃশ্যমানতা বাড়তে এটিকে প্রথম পৃষ্ঠায় র্যাঙ্ক করাতে হবে। ভিজিবিলিটি যতো বেশি হবে, তত বেশি ফ্রি (অর্গানিক) ভিজিটর (visitor) পাওয়া যায়। আর, ভিজিটর বিহীন ওয়েবসাইট যতো সুন্দর হোক না কেন মূলত সেটা মূল্যহীন।
এসইও টিপস #১ঃ কোন পৃষ্ঠায় অর্গানিক ভিজিটর পেতে হলে অব্যশ্যই ওই পৃষ্ঠাটিকে সুনির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য সার্চ ফলাফল-এর প্রথম পৃষ্ঠায় থাকতে হবে।
এস এম লুৎফর রাহমান, লুৎফরপ্রো
তো শুরু করা যাক একটা গল্প দিয়ে,
কামাল সাহেব একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তিনি দেশীও প্রযুক্তিতে ইলেকট্রিক ফ্যান তৈরি করেন। এবং তার একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে তৈরি সব মডেলের ফ্যানগুলির বিস্তারিত দামসহ দেয়া আছে।
অন্যদিকে জামাল সাহেবের একটি সিলিং ফ্যান দরকার। কিন্তু, অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বাজারে গিয়ে ফ্যান কীনতে পারছেন না। তাই, তার ভরসা অনলাইন থেকে পণ্য কীনে হোম ডেলিভারি নেওয়া। গল্পে এই দুই চরিত্র একে অন্যের পরিপূরক। এখন, জামাল সাহেব গুগল এ "সিলিং ফ্যান " লিখে সার্চ দিলেন। যথারীতি , ১০ টি রেজাল্ট আসলো।
কিন্তু, কামাল সাহেব তার পণ্য জামাল সাহেবের কাছে বিক্রি করবেন কীভাবে? বিক্রি করতে হলে তো, তার ওয়েবসাইটটি জামাল সাহাবের সার্চের পর আসা ১০টি রেজাল্টের মধ্যে আসতে হবে। তাই না? কারন অনলাইনে কামাল সাহাবের মত হাজারও মানুষ তাদের তৈরি বা মজুদকৃত সিলিং ফ্যান বিক্রি করছে।
আর, এই অবস্থায় সবচেয়ে ভাল সমাধান হল এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান।
এই পোস্ট এ আমি কিছু অ্যাক্রনেম ও টার্মস ব্যবহার করেছি। সুতরাং, সমস্যা হলে এসইও অ্যাক্রনেম ও টার্ম লিস্ট পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন।
আমরাও প্রতিনিয়ত কোনো না কোন সাইট ভিজিট করে থাকি। যেমন: আপনি এখন আমার সাইটে ভিজিট করছেন। আপনি আমার সাইটের একজন দর্শক। হয়তো, আপনি গুগল সার্চ করে আমার ব্লগ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু, আমার এই লেখা কোনো দর্শকের কাছে না পৌঁছালে এই ব্লগ বা আর্টিকেল লেখাতো এক অর্থে বৃথা। তাই আমাদের এসইও শিখতে ও প্র্যাকটিস করতে হয়।
এসইও কত প্রকার?
SEO কে কাজের মৌলিকভাবে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। অন পেজ এসইও ও অফ পেজ এসইও। তবে বর্তমান সময়ে টেকনিক্যাল এসইও কেও সমান গুরুত্ব দিয়ে এটিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। আগে যা অনপেজ এসইও এর মধ্যে ধরা হত।
টার্গেট লোকেশন এর উপরে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- লোকাল এসইও - যেখানে কিওয়ার্ড র্যাঙ্কিং এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট এলাকাকে টার্গেট করা হয়।
- গ্লোবাল SEO- র্যাঙ্কিং এর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট এলাকাকে না করে Worldwide করা হয়।
আবার এসইও প্র্যাকটিস এর উপরে ভিত্তি করে এটাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- হোয়াইট হ্যাট এসইও - যেখানে ইথিকাল ও রুলস মেনে কাজ করা হয়
- ব্ল্যাক হ্যাট এসইও - কোন রুলস ও ইথিক্স মানা হয় না।
- গ্রে হ্যাট এসইও - হোয়াইট ও ব্ল্যাক হ্যাট এর মিশ্রণে কাজ করা হয়।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কিভাবে শিখব
SEO বুঝতে বা শিখতে হলে ৫টি বিষয় বুঝতে হবে,
- সার্চ ইঞ্জিন কি? বা সার্চ ইঞ্জিন কাকে বলে,
- সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে,
- SEO এর কাজ কি? বা কিভাবে কাজ করে,
- SEO কত প্রকার
- কীভাবে একটি ওয়েবপেজকে কোন কিওয়ার্ডের জন্য প্রথম পৃষ্ঠায় আনবেন।
- কোথায় এবং কীভাবে SEO শিখবেন?
সার্চ ইঞ্জিন কি?
সার্চ ইঞ্জিন কি? কিভাবে কাজ করে এটা জানাবো এই অধ্যায়ে।
ওয়েব জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সার্চ ইঞ্জিন। একটি সার্চ ইঞ্জিন হল একটি সফটওয়্যার সিস্টেম যা ওয়েব সার্চ অর্থাৎ অনলাইনে তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব তথ্য যাচাই বাছাই করে। এবং আমার যখন কোন কিছু জানতে চাই তখন রেজাল্ট পেজে কিছু ওয়েবপেজের লিংক প্রদর্শন করে থাকে।
আপনি যখন গুগল , বিং, ইয়াহু বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে কোনো তথ্য খুঁজি তখন আমরা সার্চ বারে-এটি লিখে সার্চ দেই।
এসইও টিপস ২ঃ আমাদের সার্চ দেওয়া এসব শব্দ/ শব্দগুচ্ছকে এসইও-র ভাষায় কিওয়ার্ড বলে।
এস এম লুৎফর রাহমান, লুৎফরপ্রো
যেকোন সার্চ করলে একটা রেজাল্ট পেজ আসে , যেখানে থাকা ওয়েব পেজগুলি মূলত আমরা ভিজিট করি, তাই না?
দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় খুব একটা যাওয়া হয় না। অর্থাৎ, প্রথম পৃষ্ঠায় না থাকলে আপনার অন্যান্য অনেকটা শ্রম বৃথা। এটা বাস্তবতা। তাই প্রথম পৃষ্ঠায় rank করার বিকল্প নাই।
সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে
সার্চ ইঞ্জিন বেসিক - Search Engine গুলি তৈরি হয়েছে মুলত, আমাদের সঠিক তথ্য ও উপাত্ত খুজে দেবার জন্য। এখন যদি কোন সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে ভুল বা অনাকাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট দেয় তাহলে?
আপনি হয়ত ওই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারই করবেন না। সুতরাং জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে (SERP -এ) সবচেয়ে সঠিক Result দিতে হবে। আর সেই হিসেবে Google সেরা।
আমি এখানে গুগল কিভাবে কাজ করে সেটা বর্ণনা করেছি। কেননা যে কোনো মানদন্ডে , Google সার্চ জগতের কীং ও মোট সার্চ এর ৭৫-৮০% দখল করে আছে।
একটা বিষয় আমরা সকলেই একমত যে- প্রায় সবক্ষেত্রে আমরা সার্চ ইঞ্জিন থেকে সঠিক তথ্য পাই। তাই না?
কোন তথ্য খুঁজে দিতে হলে প্রথমে আপনাকে সেটা জানতে হয় কোথায় আছে। তাই সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনলাইনের সকল ডকুমেন্ট, ওয়েবসাইট, টেক্সটগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইনডেক্স করে নেয় বা তাদের ডাটাবেসে সংরক্ষণ করে।
কিন্তু, প্রথমত সেগুলি খুজে পেতে হবে তাই না ? তারপরে সার্চ করা শব্দের সাথে মিল রেখে সেরা উত্তর বা রেজাল্টগুলো দেখাতে হবে। আমারা জানি অনলাইনে কোন টপিকে লাখ লাখ বা কোটি কোটি ওয়েবপেজ থাকতে পারে। সেগুলো থেকে কোনটিকে প্রথমে আর কোনটিকে শেষে দিবে সেটা বোঝার বা বের করার জন্য তারা কিছু Algorithm ব্যবহার করে।
আমরা গুগল সার্চের মাধ্যমে যে রেজাল্টের লিস্ট দেখি তা ৩টি ধাপে হয়ে থাকে।
- ক্রল : এটি মূলত সফটওয়ার প্রোগ্রাম, কাজ লিংক থেকে লিংক বা ওয়েবে পেজ থেকে ওয়েবে পেজ ঘুরে বেড়ানো।
- ইন্ডেক্সিং: দ্বিতীয় ধাপ হল ইনডেক্সিং। এই ধাপেএকটি সার্চ ইঞ্জিন সিদ্ধান্ত নেয় যে এটি ক্রল করা কন্টেন্টটি ব্যবহার করবে কিনা। যদি একটি ক্রল করা ওয়েব পেজ যোগ্য বলে বিবেচিত হয়, এটি তার সূচীতে যোগ করবে বা ইনডেক্স করবে।
- র্যাঙ্কিং: যখন আমরা সার্চ ইঞ্জিনে কীছু লিখে ইন্টার বাটন Press করি, তখন তাদের সার্ভারে থাকা রিলেভেট সব ডকুমেন্টগুলো বিভিন্ন র্যাঙ্কিং অ্যালগরিদম বা ফ্যাক্টর দিয়ে আনালাইসিস করা হয়। আর এই র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টরগুলোর জন্য কোনো সাইট আগে কোনোটা পরে আসে। আর এই জন্য গুগল নিয়মিত Algorithm আপডেট দিয়ে থাকে। যাতে, SERP পেজের রেজাল্টগুলি আর ভাল ও তথ্য বহুল হয়।
সংক্ষেপে সার্চ ইঞ্জিনগুলো যেভাবে কাজ করে
আমরা ইতিমধ্যেই জানি, গুগল এবং বিং -এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলি ওয়েবেপেজ ক্রল করতে, সাইট থেকে অন্য সাইটে যেতে, সেই পৃষ্ঠাগুলির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এবং সেগুলিকে ইনডেক্স বা সূচিভুক্ত করে রাখার জন্য বট ব্যবহার করে৷ (উফফফ!)
এরপরে, অ্যালগরিদমগুলি সূচিভুক্ত থাকা পৃষ্ঠাগুলিকে বিশ্লেষণ করে, শত শত র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর বা সংকেত বিবেচনা করে, একটি প্রদত্ত প্রশ্নের জন্য সার্চ ফলাফলে কে কোন ক্রমে উপস্থিত হবে তা নির্ধারণ করে থাকে৷ এই কাজটি অনেকটা লাইব্রেরিয়ান এর মতো, লাইব্রেরিয়ান লাইব্রেরির প্রতিটি বই পড়েছেন এবং আপনাকে বলতে পারেন কোন বইটি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনসমূহ
আসুন জেনে নেই, জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন সমূহ কোনগুলো। নিচের টেবিলে তাদের জনপ্রিয়তার দিক থাকে ক্রমিকভাবে সাজানো হয়েছে -
No | Search Engine | Details |
1 | ৯০%+ সার্চ মার্কেট দখল করে আছে। গড়ে প্রতি সেকেন্ড এ 70,000 সার্চ হয়। | |
2 | Bing | ৩৩% + US মার্কেট শেয়ার করে, কীন্তু US এর বাইরে এটা খুব একটা ব্যবহার হয় না। |
3 | Baidu | Chinese সার্চ ইঞ্জিন। চায়নাতে গুগল নিষিদ্ধ। |
4 | Yahoo! | জনপ্রিয়তা দিন দিনে কমে চলছে। সার্চ রেজাল্ট Bing থেকে pull করে। 3% মার্কেট শেয়ার করে। |
5 | Yandex | Russian, ৬৫%+ রাশিয়ান এটা ব্যবহার করে। |
6 | Ask.com | ০.৩৫ সার্চ ট্রাফিক এটি ব্যবহার করে। |
7 | DuckDuckGo | এই সার্চ ইঙ্গিন কাউকে ট্রাক করেনা। ২০১৮ সালে, প্রতিদিন গড়ে 26,754,932 সার্চ হয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। |
SEO এর কাজ কি?
এতক্ষণে, আপনি হয়তো বুঝে গেছেন যে, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক তথা বিক্রি বা আয় বাড়াতে এসইও অপরিহার্য। তাই এসইও শেখা গুরুত্বপূর্ণ।
এখন, কোটি টাকার প্রশ্ন ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্কিং করিয়ে ভিজিটর আনতে- কি করতে হবে বা কিভাবে কাজ করতে হয়?
এসইও করার জন্য ৮টি ধাপ অনুসরণ করা হয়,
- ধাপ 1 : কিওয়ার্ড রিসার্চ বা খুঁজে বের করা ।
- ধাপ 2 : পেজের টাইটেল বা শিরোনামে কীওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা।
- ধাপ 3 : পেজের URL-এ কীওয়ার্ড রাখুন।
- ধাপ 4 : মেটা ডেসক্রিপশন কীওয়ার্ড রাখুন।
- ধাপ 5 : H1 টেক্সটে কীওয়ার্ড রাখুন।
- ধাপ 6 : কন্টেন্টের মধ্যে কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- ধাপ 7 : ওয়েবসাইটের ব্যাকলিঙ্ক তৈরি করুন।
- ধাপ 8 : র্যাঙ্কিং চেক করুন করুন।
কিভাবে শুরু করবেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
নতুন এসইও এক্সপার্টরা মুলত শুরুতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। কারন কোথায় কীভাবে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারেন না। আর এসইও শিখতে নিজেকে দক্ষ করতে সময় লাগেবে। সুতরাং শেখা ও প্র্যাকটিস এর জন্য সময় দিতেই হবে।
আসুন দেখে নেই (ধাপে ধাপে ) কিভাবে এসইও শুরু করবেন।
- যে কোন বেশিরভাগ ট্রাফিকই আসে সার্চ ইঞ্জিনে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ডের মাধ্যমে সার্চ করে। সুতরাং কোন ওয়েবসাইট বা পেজকে রাঙ্ক করাতে হলে সবার আগে কী-ওয়ার্ডের নির্বাচন (Keyword Research) করতে হবে। তারপরে, সার্চ ইঞ্জিনের নিয়মনীতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে অপটিমাইজড (On-page Optimization) করতে হবে।
- দ্বিতীয়, ধাপে সাইটি/ স্পেসিফিক পেজটি ইনডেক্স (Indexing) বা নথিভুক্ত করতে হবে।
- তৃতীয় ধাপটিতে Off-page optimization করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে, সোশ্যাল শেয়ার ও প্রবর্তিতেন লিংকবিল্ডিং (link building) বা Backlink তৈরি করতে হবে।
১। কিওয়ার্ড নির্বাচন (Keyword Research) কিভাবে করবেন
কিওয়ার্ড (Keyword) হল এমন সব শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যা সার্চ ইঞ্জিন user-রা ব্যবহার করেন। এখানে লক্ষণীয়, আপনি একটা বস্তুকে যে নামে সার্চ দেন বা চেনেন অন্যরা হয়ত সে নামে চেনে না বা সার্চ দেয় না।
ধরুন, একটি ওয়েবসাইট ইলেকট্রিক XYZ ব্রান্ডের ফ্যান বিক্রি করে বা করবে। সুতরাং, ওই ওয়েবসাইটের জন্য কিওয়ার্ড " XYZ ব্রান্ডের ফ্যান" বা " XYZ ফ্যান" হবে। কিন্তু, এখানে একটা প্রশ্ন হল, আসলেই কি এই দুটি কিওয়ার্ড লিখে মানুষ সার্চ করে কিনা।
অর্থাৎ আমাদের এটা দেখতে হবে যে - XYZ ব্রান্ডের ফ্যান লিখে কতজন সার্চ করে বা আসলেই মানুষ সার্চ করে কিনা।
যদি কেউ সার্চ না-ই করে না তা হলে এটি রাঙ্ক করালে কি লাভ? সেল তো হবে না। কারন সাইটে ট্রাফিক আসবে না। আর সেল হবে কি?
আমরা সবাই জানি এর উত্তর হবে না। কেউ যদি সার্চ না দিয়েই থাকে তাহলে কোন ভিজিটর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, বিক্রি হবে না।
কিওয়ার্ড রিসার্চ-এর ক্ষেত্রে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম (term) আছে। সেগুলো হলঃ
Search Volume বা মাসিক গড় সার্চের সংখ্যাঃ
কোন কীওয়ার্ডের বিপরীতে গড়ে প্রতি মাসে কতগুলি সার্চ হয়।
Keyword Difficulty Index বা কীওয়ার্ড র্যাঙ্কিং করতে কম্পিটিশন
এটি টুলসভেদে ০-১০০ বা ০-১০ বা ০-১ মেট্রিক্সে গননা করা হয়। Keyword Difficulty যতকম, ততো সহজ হবে প্রথম পৃষ্ঠায় আসা। তবে, ম্যানুয়ালি কম্পিটিশন যাচাই করা সবচেয়ে ভাল উপায়।
কিওয়ার্ড রিসার্চের টুলসঃ
কিওয়ার্ড রিসার্চ এর জন্য আমারা বিভিন্ন টুলস ও এক্সটেনশন ব্যবহার করে থাকি। এই টুলসগুলি থেকে আমরা Keyword Difficulty (KD) ও Search Volume (SV) জানতে পারি।
এমনসবচেয়ে জনপ্রিয় পেইড ও ফ্রি কিওয়ার্ড রিসার্চের কিছু টুলস নিচে দেওয়া হল।
- আস্রাফ (Ahraf.com) - পেইড,
- সেম্রাস (SEMRush.com) - ফ্রী (লিমিটেসনস আছে) ও পেইড,
- কীওয়ার্ড সারফার (Surferseo.com)- ফ্রি গুগল ক্রম এক্সটেনশান,
- WMS everywhere - ফ্রি গুগল ক্রম এক্সটেনশান,
- Googol AdWords - ফ্রি (তবে কিছু লিমিটেসনস আছে)।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন কিওয়ার্ড রিসার্চ গাইড।
২। On-page Optimization কিভাবে করবেন
অন পেজ অপটিমাইজেশনের প্রথম ধাপ হল পূর্বে বাছাইকৃত কিওয়ার্ড দিয়ে কন্টেন্টটি ভালোভাবে অপটিমাইজেশন করে নেওয়া। কোন ওয়েবপেজকে বা আর্টিকেলকে একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড এ র্যাঙ্ক করার জন্য অপ্টিমাইজেশান করতে হয়। তবে এর সাথে আপনি কিছু রিলেটেড কিওয়ার্ড ও টার্গেট করতে পারেন।
এই process-টি সংক্ষেপে বললে,
- টাইটেল এ অবশ্যই কিওয়ার্ড থাকতে হবে।
- লিংক বা আঙ্কর (Post link / post anchor)-এ কীওয়ার্ড ব্যবহার করা।
- টেক্সট এ বা Description বা পোস্ট কন্টেন্ট এ কিওয়ার্ড ব্যবহার করা।
- কিওয়ার্ডটি কন্টেন্টের মধ্যে স্বাভাবিক (Natural) ভাবে ব্যবহার করতে হবে হবে। কোনভাবেই কিওয়ার্ড স্টাফিং করা যাবে না।
- ওই টপিকের রিলেটেড কিওয়ার্ডগুলো ও কিওয়ার্ড-এর synonyms বা সমর্থক শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
- Helpful ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করতে হবে।
- Image এর alt ট্যাগ এ কিওয়ার্ড ব্যাবহার / বা LSI কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
৩। Off-page optimization কিভাবে করবেন
অফ-পেজ অপটিমাইজেশন বলতে ব্যাকলিংক বিল্ডিং বুঝায়। কিন্তু, এছাড়াও রিলেভেন্ট কীছু প্র্যাকটিস আছে যেমনঃ
- সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতে শেয়ার দেয়া (যদিও এতে রাঙ্কিং Improve হবার সম্ভবনা কম, কিন্তু, ইনডেক্সিং ও ট্রাফিক পেতে কার্যকরী উপায়)।
- রিলেভেন্ট সাইটে ব্যাকলিংক তৈরি করা।
- লিংক বানানোর সময় বাজে ও নিম্নমানের ওয়েবসাইটগুলি পরিত্যাগ করা।
- কোনভাবেই, স্পামিং না করা।
- ভাল মানের কন্টেন্টচুয়াল (contractual) লিংক তৈরি করা।
- যেমন ওয়েব ২.০ ব্যাকলিংক তৈরি করা একটি অফ পেজ এসইও- এর কাজ।
কীভাবে একটি ওয়েব পেজকে প্রথম পৃষ্ঠায় Rank করবেন
একজন এসইও এক্সপার্ট -এর কাজ হল সার্চ ইঞ্জিনের এই সকল রাঙ্কিং ফ্যাক্টর জন্য একটি ওয়েবসাইটকে অপ্টিমাইজ করা।
গুগলের 200+ র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর আছে, যার সবগুলো সমান গুরুত্ব রাখে না। তবে এই পোস্টে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাক্টরগুলো তুলে ধরা হলো।
গুরুত্বপূর্ণ র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর
- ওয়েবসাইট ক্রলাবিলিটি ও স্ট্রাকচার, HTTTPS, User Experience
- ইউনিক ইনফরমেটিভ, মানসম্মত অপটিমাইজড কন্টেন্ট,
- সার্চ ইন্টেট (Search intent), কন্টেন্ট length,
- টাইটেল ট্যাগ, ইউআরএল, ডোমেইন এইজ , কেনোনিক্যাল ট্যাগ
- ইমেজ অপটিমাইজেশন,
- কীওয়ার্ড প্রমিনেন্স ও পোষ্টিং,
- মোবাইল ফ্রেন্ডলিনেস,
- রিলিভেন্সি লিংক, Total referring domains
- পেইজ স্পিড,
- টপিকাল অথোরিটি,
- E-A-T
- সোশ্যাল সিগন্যাল, ইত্যাদি ।
কোথায় এবং কিভাবে SEO শিখবেন?
নিজেকে এসইও এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ভালভাবে এসইও-র টুকিটাকি বিষয় গুলি শিখতে হবে।
ইউটিউব ও গুগলে এই বিষয়ে প্রচুর ভিডিও ও আর্টিকেল আছে। তছাড়াও অনলাইন ও অফলাইন এ বিভিন্ন ট্রানিং প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে Course প্রদান করে।
আপনি, উপরের ২টি উপায়ের যে কোন একটি নিতে পারেন। কীন্তু আমার সাজেশন হবে আগে অনলাইন থেকে শিখুন পরে Course করে নিতে পারেন।
নিজে নিজ কিভাবে এসইও এক্সপার্ট হওয়া যায় সে সম্পর্কে আমার একটি পৃথক পোস্ট আছে। আশাকরি, সেটা পড়ে নিবেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে দুটি কথা
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও কোন ম্যাজিক না, একদিনে শেখা সম্ভব নয়। আবার, কোন সাইটকে একদিনেই র্যাঙ্ক করানো সম্ভব না।
এসইও শিখতে ৩- ৫ মাস সময় লাগতে পারে, কিন্তু, এখানে আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপ টু ডেট রাখতে হয়। কেননা অন্য সব প্রযুক্তির মত এসইও দ্রুত পরিবর্তনশীল। আবার নতুন বিষয় বা দক্ষতা অর্জনের ব্যপারটি থাকে, তাই আপনকে শিখতে হবে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই।
আবার একটি সাইটকে র্যাঙ্ক করানোর পরে সেটা ধরে রাখতেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়। কারণ, এসইওতে ROI অন্য সব অনলাইন বিপনন মাধ্যম থেকে বেশি। আর তাই সব ব্যবাসা প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্ক করার মাধ্যমে তাদের ভিজিটর ও বিক্রয় বাড়তে চায়।
আশাকরি, আপনার এসইও সম্পর্কে জানার চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি। যদি তাই হয় তবে পোস্টটি শেয়ার করুন। আর আরও বিস্তারিত জানতে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন